জানুন পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোন মিষ্টি বিখ্যাত

বাঙালির নববর্ষ থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী, উৎসব অনুস্থান, অতিথি আপ্পায়ন, সর্বোপরি রসনাতৃপ্তি কোনও কিছুই মিষ্টি ছাড়া সম্পূর্ণ হয়না। আর বাঙালির মিষ্টি মানেই যে রসগোল্লা তা কিন্তু নয়। তাই মালদার রসকদম্ব শক্তিগড়ের ল্যাংচা, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া সরভাজা সহ একটা জিভে জল আনা বাংলার মিষ্টির তালিকা বানানো হল।

 

) বাগবাজারের রসগোল্লা


বাগবাজারের স্পঞ্জ রসগোল্লা

 রসগোল্লা বাংলা তথা বাঙালীর সবথেকে প্রিয় মিষ্টি। রসগোল্লা অর্থাৎ রসের গোল্লা, দুধের ছানা দিয়ে তৈরি সাদা রঙের এক ধরনের রসের মিষ্টি।  এটিতে সাধারনত চিনি রস ব্যবহার করা হয় কিন্তু শীতের মরসুমে নলেন গুড়ের তৈরি রসগোল্লাও যথেষ্ট বিখ্যাত  ছানা পাকিয়ে গরম রসে ডুবিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়। কলকাতার বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস ১৮৮৬ সালে প্রথম নরম তুলতুলে স্পঞ্জ রসগোল্লার সৃষ্টি করেন। তাকে রসগোল্লার কলম্বাস বলা হয়। যদিও এই রসগোল্লা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও প্রতিবেশী ওড়িশার বিরোধ বহু দিনের। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রসগোল্লার জিআই ট্যাগ লাভ করে। রাজ্যের সব জেলার সব দোকানেই কম বেশি রসগোল্লা পাওয়া গেলেও বাগবাজারের স্পঞ্জ রসগোল্লার স্বাদই আলাদা। আর সেই কারনেই এটি জনপ্রিয়।

 

) বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা

বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা

 বর্ধমানের সীতাভোগ বাংলার এক সুপ্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন। এটা অনেকটা বাসমতী চালের ভাতের মত দেখতে হয়। সীতাভোগের প্রধান উপাদান সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল। এই চাল গুঁড়ো করে তাতে ১:৪ অনুপাতে ছানা মিশিয়ে পরিমাণমত দুধ দিয়ে মাখা হয়।তারপর একটি  ছিদ্রযুক্ত পিতলের পাত্র থেকে উক্ত মিশ্রণকে গরম চিনির রসে ফেলা হয়। এর ফলে সীতাভোগ বাসমতীর চালের ভাতের মত দেখতে লম্বা সরু সরু দানাযুক্ত হয়। এর সাথে ছোট ছোট গোলাপজাম এবং কখনো কখনো কাজুবাদাম ও কিশমিশ মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।

১৯০৪ সালে বড়লাট জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন বর্ধমানের জমিদার বিজয়চাঁদ মহতাবকে মহারাজা খেতাব দিতে বর্ধমান ভ্রমণ করেন। কার্জনের বর্ধমান আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজয়চাঁদ মহতাব বর্ধমানের জনৈক মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন। ভৈরবচন্দ্র নাগ সীতাভোগ ও বর্ধমানের অপর বিখ্যাত মিষ্টান্ন মিহিদানা তৈরী করেন।

মিহিদানার প্রধান উপাদান চাল। মিহিদানা প্রস্তুতিতে সাধারণত গোবিন্দভোগ, কামিনীভোগ অথবা বাসমতী চাল ব্যবহার করা হয়। চাল গুঁড়ো করে তার সাথে বেসন এবং জাফরান মেশানো হয়। তারপর জল মিশিয়ে ঈষৎ পীতাভ একটি থকথকে মিশ্রণ তৈরী করা হয়। একটি ছিদ্রযুক্ত পেতলের পাত্র থেকে উক্ত মিশ্রণ কড়াইতে ফুটন্ত গাওয়া ঘিতে ফেলা হয়। তারপর দানাগুলি কড়া করে ভেজে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তুলে চিনির রসে রাখা হয়।

 

) মানকরের কদমা , পূর্ব বর্ধমা


মানকরের কদমা

কদমা একটি শুকনো মিষ্টি বিশেষ। বাংলায় অনেক পুরনো মিষ্টির মধ্যে কদমা, বাতাসা, নকুলদানা অন্যতম। রসগোল্লা, পান্তুয়ার আবির্ভাবের পূর্বে বাংলায় অতিথি আপ্যায়নে কদমা বাতাসা দেওয়াই রীতি ছিল। এখন আর এই মিষ্টির আগের কৌলীন্যতা নেই। কেবল পূজার কাজে এখনও বহুল ব্যাবহৃত হয় কদমা। বর্তমান পূর্ব বর্ধমানের মানকর এই কদমার জন্য বিখ্যাত।

 

) অগ্রদ্বীপের (কাটোয়া) ছানার জিলিপি, বর্ধমান


ছানার জিলিপি, বর্ধমান

ছানার জিলিপি বাংলার মিষ্টির মধ্যে অন্যতম। নদীয়ার মুড়াগাছা অঞ্চলে এই মিষ্টান্নটির উত্পত্তি। ছানার বিভিন্ন মিষ্টির মধ্যে এটি অন্যতম কুলীন মিষ্টান্ন। পান্তুয়া গোত্রের এই মিষ্টিটি নদীয়ার মুড়াগাছা ছাড়াও মেদিনীপুরের মেচেদা পাশকুড়ার পাওয়া যায়। এছাড়াও কলকাতার ভূপতি রায়ের দোকানের ছানার জিলিপি বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে ভূপতি রায়ের দোকান আর নেই।


) বর্ধমানের দরবেশ


বর্ধমানের দরবেশ

দরবেশ বাংলার তথা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। এটি মূলত বোঁদে থেকে তৈরি হওয়া লাড্ডু। এই লাড্ডুতে লাল, হলুদ ও সাদা এই তিন রঙের বোঁদে ব্যবহার করা হত। দরবেশদের আলখাল্লা নানা রঙের হয়ে থাকে। এখন যেহেতু এই লাড্ডুও নানা রঙের বোঁদে দিয়ে তৈরি হত, তাই এর নাম রাখা হয় দরবেশ। বর্তমানে দরবেশ সধারণত লাল ও হলুদ রঙের বোঁদে দিয়েই তৈরি করা হয়।

                                                          

) শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বর্ধমান


শক্তিগড়ের ল্যাংচা

ল্যাংচা এক রকমের কালচে বাদামী রঙের লম্বাটে রসের মিষ্টি। এর প্রধান উপকরণ ময়দা, ছানা, খোয়া আর চিনি। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিগড়ের ল্যাংচা বিখ্যাত।

কথিত আছে বর্ধমানের মহারাজা কোন এক ময়রাকে বলেন যে তিনি এক নতুন ধরণের ভাজা মিষ্টি খেতে চান। তখন ঐ কারিগর তাড়াতাড়ি এক নতুন ধরনের মিষ্টি প্রস্তুত করেন। নতুন মিষ্টিটি খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। এই ভাবে ল্যাংচার জন্ম হয়। ঐ নতুন মিষ্টির করিগর ল্যাঙরা ছিলেন বলে মিষ্টির নাম হয় ল্যাংচা।

  

) সিউড়ীমোরব্বা, বীরভূম


সিউড়ীর মোরব্বা

আমলকীর মোরব্বা

মোরব্বা হলো খুব ঘন চিনির রসে ডোবানো একপ্রকার মিষ্টান্ন যা সাধারণত কোনো সবজিকে বিশেষভাবে জারিত করে প্রস্তুত হয়। যেমন: পেপের মোরব্বা, কুমড়োর মোরব্বা, পটলের মোরব্বা, শতমূলীর মোরব্বা ইত্যাদি।

) রামপুরহাটের রসমালা‌ই, বীরভূম


রামপুরহাটের রসমালা‌ই

রসমালাই বাংলার অতি বিখ্যাত মিষ্টান্ন। ছোট ছোট আকারের রসগোল্লাকে চিনির রসে ভিজিয়ে তার ওপর জ্বাল-দেওয়া ঘন মিষ্টি দুধ ঢেলে রসমালাই বানানো হয়। বাংলাই রসমালাইয়ের উৎপত্তিস্থল। বাঙালি ময়রা কৃষ্ণচন্দ্র দাস প্রথম রসমালাই তৈরি করেন। তবে এই দাবির স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

 

) জয়নগরের মোয়া, দক্ষিণ ২৪ পরনা


জয়নগরের মোয়া,

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগর শহর এই মিষ্টান্নটির জন্য খুব বিখ্যাত। জয়নগরের মোয়ার প্রধান উপাদান কনকচূড় ধানের খই, নলেন গুড়(খেজুর গুড়) ও গাওয়া ঘি। এছাড়াও ক্ষীর, পেস্তা, কাজুবাদাম, কিসমিস দিয়ে তৈরী হয় অতি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন।  জয়নগর শহরের পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ওরফে বুঁচকিবাবু এবং নিত্যগোপাল সরকারকে জয়নগরের মোয়ার বাণিজ্যিক বিপণনের পথিকৃৎ বলে ধরা হয়। মূলত শীতের মরসুমে এই মিষ্টি পাওয়া যায়।

                                                        

১০) কৃষ্ণনগরের সরপুরিয় ও সরভাজা, নদীয়া



সরভাজা কৃষ্ণনগরের একটি বিখ্যাত মিষ্টি। দুধের সর ও ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির সুনাম বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গাপুজো, কালীপুজো ছাড়াও কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোতে সরভাজা চাহিদা অন্য সময়ের থেকে বেশি থাকে। প্রচলিত মতে সরপুরিয়ার আর সরভাজার সৃষ্টিকর্তা কৃষ্ণনগরের অধরচন্দ্র দাস


কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া বিখ্যাত ও জনপ্রিয় এক মিষ্টান্ন। দুধের সর তুলে একের পরে এক স্তরে সরকে রাখা হয়। তার পর সেই মোটা সরকে ঘিয়ে ভাজা হয়। তার উপর আলমন্ড, খোয়া ক্ষীর ও এলাচ ছড়িয়ে তার উপর আর এক স্তর ভাজা সর রাখা হয়। তারপর তাকে চিনি মেশানো দুধে রাখা হয়। এয়াভবেই তৈরি হয় কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত সরপুরিয়া। কৃষ্ণনগর ছাড়া বাংলার আর কথাও ভালো সরপুরিয়া মেলে না।

১১) নবদ্বীপের লালদ‌ই, নদীয়া


নবদ্বীপের লালদ‌ই

নদিয়ার নবদ্বীপের লাল দই বা ক্ষীর দই বা চাক্কু দই বা মিষ্টি দই বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন। দই বা দধি মিষ্টান্ন পরিবারের কুলীন সদস্য। দই সাধারনত সাদা হলেও লাল দই একটি স্বতন্ত্র উপাদেয় মিষ্টান্ন। এই দই তৈরির সময় ভাজা লাল চিনি দেওয়া হয় যা থেকে এর রং লালচে ও স্বাদে মিষ্টি হয়। ১৯৩০ সালের দিকে নবদ্বীপের জনৈক কালিপদ মোদক, মতান্তরে কালী ঘোষ, এই দই প্রথম প্রস্তুত করেন। ১৫০ বছরেরও প্রাচীন পাঁচুর মিষ্টির দোকান 'লক্ষ্মী নারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার' অন্যতম বিখ্যাত লাল দইয়ের দোকান। দই তৈরি করার পর দশদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

) রানাঘাটের পান্তুয়া, নদীয়া


রানাঘাটের পান্তুয়া

 রসগোল্লার পরেই বাঙালির পছন্দের মিষ্টি হল পান্তুয়া। ছানাকে ভালো করে বেটে নিয়ে ছানার সাথে ঘি, ময়দা, সোডা, গুড়, এলাচ গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া হয়। এরপর মিশ্রণটিকে ভাল করে মেখে গোল পাকিয়ে নিয়ে ডোবা তেলে ভেজে গরম রসে ফেলে পান্তুয়া তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গে রানাঘাটের পান্তুয়া বিখ্যাত। যদিও কাটোয়া ও কালনাতেও যথেষ্ট ভালো পান্তুয়া পাওয়া যায়।

রানাঘাটের পান্তুয়ার বাইরেটা শক্ত ভিতরটা নরম, একটু বেশিই খোয়া ক্ষীর ব্যবহার করা হয়। স্বাদটা নির্ভর করে ভাজার টেকনিকের উপর। তাই বাংলার সব জায়গাতেই পান্তুয়া পাওয়া গেলেও  রানাঘাটের  এই পান্তুয়ার স্বাদ অন্য কোনও জায়গার পান্তুয়ার মধ্যে পাওয়া যায় না।

রানাঘাটের জ‌গু ময়রা (যজ্ঞেশ্বর প্রামাণিক) কে পান্তুয়ার জনক বলে মনে করা হয়। জ‌‌গু ময়রার নামে দোকান এখনও পর্যন্ত রয়েছে রানাঘাটে। তার পরবর্তী বংশধররা পান্তুয়ার ঐতিহ্য কে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

 

১৩) শান্তিপুরের নিখুঁতি, নদীয়া


শান্তিপুরের নিখুঁতি

নিখুঁতি (বানানভেদে নিখুতি বা নিকুতি) বাংলার এক অতি জনপ্রিয় মিষ্টি। গঠনগত দিক থেকে নিঁখুতি পান্তুয়া জাতীয় মিষ্টি হলেও  এটি আকৃতিতে লম্বাটে, খানিকটা ল্যাংচার মত। এর বাইরেটা শক্ত কিন্তু ভেতরটা নরম। পরিবেশনের সময় নিখুঁতির উপর হালকা গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। নিখুঁতির পায়েসও ভীষণ জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিপুরের নিখুঁতি অতি বিখ্যাত। শান্তিপুর ছাড়া কৃষ্ণনগর, বাঁকুড়া পুরুলিয়াতেও নিখুঁতি মেলে।

 

১৪) মালদহের রসকদম্ব


মালদহের রসকদম্ব

রসকদম্ব বা রসকদম বাংলার এক বিখ্যাত মিষ্টি। রসকদম্বের ভেতরে থাকে ছোট একটি কড়া পাকের তৈরি রসগোল্লা আর তার উপর থাকে ক্ষীরের স্তর। তারও উপরে থাকে চিনি মাখানো পোস্ত দানা। এর জন্য এই মিষ্টি টিকে অনেকটা কদম ফুলের মতো দেখতে লাগে বলেই এই মিস্তির নাম হয়েছে রসকদম্ব। এটি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি।

রসকদম্বের মূল উপাদান ছানা, ক্ষীর, চিনি পোস্ত। প্রথমে ছানা দিয়ে মাঝারি থেকে ছোট আকারের রসগোল্লা তৈরী করা হয়। তারপর দানাদার তৈরী করার মত করে রসগোল্লা থেকে বাড়তি রস ঝেড়ে ফেলা হয়। এই রসগোল্লায় লাল রঙ দেওয়া হয় ভ্যানিলা এসেন্স যোগ করা হয়। তারপর রসগোল্লাকে গুঁড়ো খোয়া ক্ষীরের আস্তরণে ঢেকে ফেলা হয়। সব শেষে মাঝারি রকমের ভাজা পোস্তর একটি প্রলেপ দিয়ে মিষ্টিটাকে কদম ফুলের মত দেখতে করা হয়।

কথিত আছে আলাউদ্দিন হুশেন শাহর রাজত্বকালে গৌর মালদার রামকেলীতে এসেছিলেন মহাপ্রভু চৈতন্যদেব। বিশ্রাম নিয়েছিলেন এক কদম গাছের নিচে, তখন গাছটি কদম ফুলে ভর্তি ছিল। এখানে তিনি রূপ সনাতন কে দীক্ষা দেন। শোনা যায় এই ঘটনা কে স্মরনীয় করে রাখতে মালদার করিগড়েরা তৈরী করে রসকদম্ব বা রসকদম।

১৫) মালদহের কানসাট


মালদহের কানসাট

মালদহের আমের পরই জেলার বিখ্যাত মিষ্টি  হিসাবে নাম আসে কানসাটের আসলে কানসাট হল অধুনা বাংলাদেশের একটি অঞ্চল। বাংলাদেশের শিবগঞ্জ জেলার প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ সাহা এই মিষ্টির উদ্ভাবক। পরে তার পুত্র বিজয় কুমার সাহা মালদায় কানসাটের যাত্রা শুরু করেন।

দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে ওপার বাংলার শিবগঞ্জ জেলায় কানসাট অঞ্চল থেকে প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ সাহার পুত্র বিজয় কুমার সাহা মালদায় চলে আসেন। তার হাত ধরেই বাংলার মালদহে কানসাটের যাত্রা শুরু তিনই এর নাম রাখেন কানসাট।

কানসাটের উপাদান ভালো ক্ষীর হলেও ছানার গুণমানের ওপরেও এর স্বাদ নির্ভর করে। ভাল করে ঠিক ঠাক জাল হলে সেই জালের উপরে ভাজা ক্ষীর বা খোয়া ক্ষীর ছড়িয়ে দিলেই তৈরি হয় কানসাট।

 

১৬) বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশ, বাঁকুড়া

মেচা সন্দেশ


ম্যাচা বা মেচা সন্দেশ পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার এক জনপ্রিয় মিষ্টি। বেলিয়াতোড়ের ম্যাচা সন্দেশ অত্যন্ত প্রসিদ্ধ এবং সব চেয়ে উৎকৃষ্ট বলে গণ্য করা হয়। শোনা যায় অন্তত তিনশো বছর আগে মল্ল রাজাদের প্রিয় ছিল এই মিষ্টি৷ মুগডাল চিনি দিয়ে ম্যাচা সন্দেশ তৈরী করা হয়। মুগডালবাটার সাথে চিনি মিশিয়ে পাক প্রস্তুত কতা হয় তারপর গোল্লা পাকানো হয়। পরে এর উপর একটি চিনির প্রলেপ দেওয়া হয়। ম্যাচা দেখতে অনেকটা মনোহরার মত। পূর্বে ম্যাচার জনপ্রিয়তা বর্তমানে অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

) বহরমপুরের ছানাবড়া, মুর্শিদাবাদ

বহরমপুরের ছানাবড়া


লালবাগের ছানাবড়া বাংলার মিষ্টির মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ শহরে এই মিষ্টির আবির্ভাব। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে এই মিষ্টি আবিষ্কার হয় বলে মনে করা হয়। লালবাগের এক মিষ্টির দোকানের মালিক ছিলেন নিমাই মণ্ডল। তার হাত ধরেই ছানাবড়ার পথ চলা শুরু। তাঁর দোকান থেকেই নবাবের প্রাসাদে নিয়মিত ছানাবড়া সরবরাহ করা হতো। রুপোর থালায় এক মণ বা দেড় মণ সাইজের পেল্লায় ছানাবড়া সাজিয়ে নবাবরা অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতেন এবং এতে অতিথিদের চোখ নাকি ছানাবড়া- হয়ে যেত। সেই থেকেই চোখ ছানাবড়া কথাটার উদ্ভব।

আবার এই কথাও প্রচলিত যে কাশিমবাজারের মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী ইংরেজদের খুশি করতে নতুন কিছু উপহার দিতে চাইলেন। তাই তিনি তার রাঁধুনিদের নতুন ধরণের মিষ্টি বানাতে আদেশ দিলেন যা রসগোল্লা বা পান্তুয়ার মত নয়। রাজার কারিগড়েরা ছানাকে ঘিএ ভেজে তৈরী করলেন ছানাবড়া। যেহেতু ছানাকে ঘিতে ভেজে মিষ্টি তৈরী হল তাই নাম হল ছানাবড়া।

) জনাইএর মনোহরা, হুগলী।

জনাইএর মনোহরা


মনোহরা পশ্চিমবঙ্গের এক অতি জনপ্রিয় মিষ্টি। পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জনাইয়ের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মনোহরা অতি জনপ্রিয় অনেক জায়গায় চাউনি সন্দেশ বলেও পরিচিত। একবার এলাকার জমিদারের ইচ্ছা হল, বাইরে কোথাও গেলেও নরম সন্দেশ খাবেন৷ কিন্তু তখন তো রেফ্রিজারেটর ছিল না৷ আবার দু’চার দিন রেখে খেতে হলে কড়াপাক সন্দেশ ছাড়া উপায় নেই৷ অনেক ভেবে করিগর নরম সন্দেশ তৈরি করে তার উপরে ঢেলে দিলেন চিনির রস৷ তাতে নরমপাক সন্দেশ বেশ কয়েকদিন রেখে খাওয়ার উপযোগী হয়ে গেল৷ মিষ্টির নাম হল মনোহরা

মনোহরা হল ছানা চিনির অথবা সরচাঁছি ক্ষীরের মিশ্রণের গোল্লার উপর চিনির স্তর দেওয়া একটি গোলকাকৃতি মিষ্টি। কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গিরীশচন্দ্র দে নকুড়চন্দ্র নন্দী চিনির বদলে নলেন গুড়ের প্রলেপ দেওয়া মনোহরার প্রচলন করেন।


) কামারপুকুরের সাদা বোঁদে, হুগলী


সাদা বোঁদে


কামারপুকুরের সাদা বোঁদে পশ্চিমবঙ্গের এক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অত্যন্ত প্রিয় ছিল এই মিষ্টান্ন। প্রচলিত বোঁদের সাথে এই বোঁদের অনেক পার্থক্য রয়েছে।

কামারপুকুরের সাদা বোঁদের প্রধান উপাদান রমা কলাইয়ের বেসন আতপ চালের গুঁড়ো। তার সাথে লাগে গাওয়া ঘি বা বনস্পতি চিনির রস। রমা কলাই বা রম্ভা কলাই বলতে বরবটির বীজকে বোঝানো হয়। সেই জন্য রমা কলাইয়ের বেসনকে বরবটির বেসনও বলে।


২০) গুপ্তীপাড়াগুপো সন্দেশ, পানিহাটি হুগলী


গুপো সন্দেশ, পানিহাটি হুগলী

গুপো সন্দেশ পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। গুপো সন্দেশ হল মাখা সন্দেশ থেকে প্রস্তুত এবং পাশাপাশি চেপে লাগানো এক জোড়া গোলাকৃতি সন্দেশ। গুপো সন্দেশকে বাংলার প্রথম ব্র্যান্ডেড মিষ্টি বলে মনে করা হয়।

কথিত আছে, হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়াতেই সন্দেশের জন্ম। এখানেই প্রথম তৈরি হয় সন্দেশের মিশ্রণ, যা মাখা সন্দেশ নামে পরিচিত। পরে সেই মাখা সন্দেশকেই আকার দিয়ে তৈরি হয় গুপো সন্দেশ। গুপো সন্দেশ কালক্রমে কলকাতার অভিজাতদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। উৎসবে অনুষ্ঠানে কলকাতার অভিজাতরা গুপ্তিপাড়ায় ছুটতেন গুপো সন্দেশ কিনতে। ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে পানিহাটির গুপো সন্দেশ কলকাতায় খুব জনপ্রিয় হয়।

 

) চন্দননগরের জলভরা – তালশাঁস (সন্দেশ), হুগলী 


চন্দননগরের জলভরা – তালশাঁস (সন্দেশ)

হুগলী জেলার চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো যেমন বিখ্যাত, তেমনই বিখ্যাত এখানকার জলভরা সন্দেশ। জলভরা সন্দেশ তালশাঁস আকৃতির কড়াপাকের এক বিশেষ সন্দেশ। হুগলি জেলার সূর্যকুমার মোদক এই মিষ্টির আবিষ্কর্তা। শহরের সব দোকানেই জলভরা সন্দেশ পাওয়া যায়। স্বাদে কমবেশি সকলেই সমান। কিন্তু নামে সবার উপরে ‘সূর্য মোদক’-এর জলভরা।

এই সন্দেশ বানানোর মূল উপাদান ছানা, চিনি, গোলাপজল নলেন গুড়। সূর্য মোদকের দোকানে গোলাপজল আসে নিয়ম মেনে কনৌজ থেকে। কিছুটা সন্দেশ প্রথমে ছাঁচের মধ্যে দিয়ে আঙুলের চাপে একটা গর্ত করে নেওয়া হয়। সেই গর্তে গোলাপজল ঢেলে আবার সন্দেশ দিয়ে বাকিটা ঢেকে ছাঁচের মুখ বন্ধ করে দিতে হয়। এভাবেই জলভরা সন্দেশ তৈরী করা হয়।

 

২২) কাঁথীর কাজুবরফী,পূর্ব মেদিনীপুর

কাঁথীর কাজুবরফী


মেদিনীপুর জেলার কাঁথীর কজু বরফী বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। ভারতের নানা জায়গায় এই মিষ্টি পাওয়া গেলেও কাঁথীর কাজু বরফীর স্বাদই আলাদা। প্রায় ৮৫ বছর আগে কাঁথিতে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি করেন প্রয়াত মিষ্টি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ প্রধান বা কালু ময়রা।

প্রথমে কাজুবাদামকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গুঁড়ো করা হয়। তারপর সেই গুঁড়ো দিয়েই তৈরি করা হয় মিষ্টি। আর স্বাদের জোরেই এই মিষ্টি মন কেড়েছে বিদেশের মানুষেরও টোকিও, নিউ ইয়র্ক, লাস ভেগাস, মালয়েশিয়া এমনকী প্যারিসেও রফতানি হয়েছে এখানার মিষ্টি।


২৩) কেশপুর ও ডেবরার মুগের জিলিপি, পশ্চিম মেদিনীপু


মুগের জিলিপি

মুগের জিলিপি বাঙালিদের মধ্যে এক জনপ্রিয় মিষ্টি। সাধারণ জিলিপি তৈরিতে যে উপাদান ব্যবহার করা হয় তার পরিবর্তে এই জিলিপিতে মুগের ব্যবহার মিষ্টিতে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। মুগডাল উপাদানের জন্য এই মিষ্টি সাধারণ জিলিপি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটি মিষ্টিতে পরিণত হয়েছে। মুগের জিলিপির প্রধান উপকরণ মুগ ডাল, ঘি চিনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ডেবরার মুগের জিলিপি বিখ্যাত।

 

২৪) ক্ষীরপাই এর বাবরসা, পশ্চিম মেদিনীপুর

ক্ষীরপাই এর বাবরসা


বাবরসা বা বাবরশা হল পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই এলাকার প্রসিদ্ধ একটি মিষ্টি। জানা যায়, ১৭৪০-১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় বর্গিরা একাধিকবার ক্ষীরপাই শহর আক্রমণ করে। বর্গিদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এলাকা ছাড়তে শুরু করেন বাসিন্দারা। সেই সময় এডওয়ার্ড বাবরশ নামে এক সাহেব বর্গিদের হঠিয়ে দেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ স্থানীয় এক মিষ্টি ব্যবসায়ীবাবরশানামে একটি খাবার তৈরি করে এডওয়ার্ডকে উপহার দেন। সেই থেকেই শহরের মানুষের পছন্দের মিষ্টির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাবরসা।

মূলত ময়দা, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয় বাবরসা। ছাঁচে ফেলে ভেজে রাখা হয়। এর পর খাওয়ার সময় তাতে রস ঢেলে পরিবেশন করা হয়। আগে অবশ্য মধুতে ডুবিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল।

 

) চমচম- বেলাকোবা, জলপাইগুড়ি 


চমচম- বেলাকোবা


বেলাকোবার চমচম পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে এক অতি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। এটি সাধারণ চমচম থেকে আলাদা। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির জেলার বেলাকোবা নামক স্থানে এই বিশেষ প্রকৃতির চমচম প্রথম তৈরি হয় বলেই এই মিষ্টি বেলাকোবার চমচম নামে প্রসিদ্ধ।

বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম অতি জনপ্রিয়। সেই পোড়াবাড়ির চমচমের ঘরানার সাথে বেলাকোবার চমচমের ঘরানার কতকগুলি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পোড়াবাড়ির চমচমের বৈশিষ্ট হলো কড়াপাক। কিন্তু, বেলাকোবায় চমচমে কড়াপাকের সাথে যুক্ত হয় অধিক পরিমাণে ক্ষীর। পেল্লাই আকারের গোলাপি চমচমে বরফের কুচির মত ছড়িয়ে দেওয়া হয় ক্ষীরের দানা।

বেলাকোবার চমচমের প্রধান উপাদান ছানা, ময়দা, চিনির রস খোয়া ক্ষীর।


) প্যাড়া- ছাতনা, বাঁকুড়া

প্যাড়া- ছাতনা


প্যারা সন্দেশের ইতিহাস শত বছরের পুরানো। প্রথমে শুধু দেব-দেবীর আরাধনায় মিষ্টান্নর প্রয়োজন এই উদ্দেশ্যেই সন্দেশ তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে সর্বসাধারণের জনপ্রিয় মিষ্টান্নে পরিণত হয়েছেমহেন্দ্রী দাস নামের এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় তৈরি করা শুরু করেন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার ছাতনার প্যাড়া বেশ প্রসিদ্ধ।

 

২৭) মন্ডা ও মিঠাই- প্রেমের ডাঙ্গা, কোচবিহার

মন্ডা ও মিঠাই


মণ্ডা গোল চ্যাপ্টা আকৃতির বাঙালি মিষ্টান্ন। দেখতে অনেকটা পেঁড়ার মত। 'মণ্ডা-মিঠাই' বাংলার একটি বহুল প্রচলিত শব্দবন্ধ। সাধারণত কড়াপাকের চিনি মেশানো ক্ষীরের তাল পাকানো গোল মণ্ডকে পরিষ্কার শক্ত কোন তলে বিছানো কাপড়ের ওপর হাত দিয়ে ছুঁড়ে সাধারণত ভাবে চ্যাপ্টা করার কাজটি করা হয়। পরে ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যায় তখন কাপড় থেকে খুলে নেওয়া হয়। তাই যেদিকটা নীচে (কাপড়ে লেগে) থাকে, সেটা পুরো সমতল হয়, আর অন্য দিকটা একটু উত্তল আর কিনারা একটু ফাটা ফাটা হয়। ক্ষীরের রঙের ওপর নির্ভর করে মণ্ডা সাদা বা ঈষৎ হাল্কা খয়েরি রঙের হয়।


২৮) লালমোহন (গোলাপ জাম) - ফুলবাড়ি, শিলিগুড়ি

লালমোহন (গোলাপ জাম) - ফুলবাড়ি


শিলিগুড়ি শহরের অনতিদূরে জলপাইগুড়ি যাওয়ার পথে ফুলবাড়ি অবস্থিত। আর সেখানেই পাওয়া যায় বাংলার বিখ্যাত মিষ্টি লালমোহন।

দেশ ভাগের পর বাংলাদেশের মনিন্দ্র মোহন ঘোষ ফুলবাড়ি এলাকায় চলে আসেন। তার হাতেই এই মিষ্টির জন্ম। তিনই এর নাম রাখেন লালমোহন।


২৯) কমলাভোগ- মাদারিহাট, আলিপুরদুয়ার


কমলাভোগ

রসগোল্লার থেকে আকারে সামান্য বড়, মাদারিহাটের কমলাভোগ পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টির মধ্যে অন্যতম। কমলাভোগ নামের কারণ এই মিষ্টিতেও কমলালেবু ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রচলিত ফল মিশিয়ে বা ফলকেও ছানার সাথে ব্যবহার করে যে সকল মিষ্টি তৈরী করা হয়, তাদের মধ্যে কমলাভোগের সমাদর আছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে ডুয়ার্স এবং তরাই অঞ্চল থেকে এই মিষ্টির পথ চলা। কলকাতার ভীমচন্দ্র নাগ রস জাতীয় মিষ্টির মধ্যে কমলাভোগের সুনাম আছে।


) মতিচুড়ের লাড্ডু- বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া


মতিচুড়ের লাড্ডু


'লাড্ডু' শব্দটি সংস্কৃত শব্দ 'লাড্ডুকা' বা 'লাত্তিকা' থেকে এসেছে যার অর্থ 'ছোট বল' আর হিন্দিতে 'মতি' শব্দের অর্থ 'মুক্তা' 'চুর' অর্থ 'ভাঙা' বা 'চূর্ন-বিচুর্ন' করা। অর্থাৎ 'মতিচুর' মানে 'মুক্তার ভাঙা গুঁড়া' ছোট ছোট মুক্তা দানার মতো বুন্দিয়া বানিয়ে সেগুলোকে একসাথে হাতে চেপে তৈরি হয় মতিচুরের লাড্ডু। আর এইজন্যই এমন চমৎকার নামের উৎপত্তি। মতিচুরের লাড্ডু ভারত উপমহাদেশের একটি প্রাচীন মিষ্টি। এর বয়স দু'হাজার বছরেরও বেশি। মনে করা হয়, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে বিহারে এই মিষ্টির উৎপত্তি হয়। তবে বাংলার বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মতিচুরের লাড্ডু বেশ বিখ্যাত।


) কাস্তার লাড্ডু- কাশিপুর, পুরুলিয়া


কাস্তার লাড্ডু


কাস্তার লাড্ডু বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। পঞ্চকোট রাজ্যের রাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেওয়ের পৃষ্ঠপোষকতার এই মিষ্টির প্রচলন হয়। মিষ্টান্নপ্রিয় রাজার রসনা তৃপ্তির কথা ভেবে লাড্ডু বানানো হয়। এই মিষ্টি কাশিপুর এবং সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও তেমন পরিচিত নয়। বিলুপ্তপ্রায় এই লাড্ডু দু'চারটি মিষ্টির দোকানে এখনও পাওয়া যায়। "রাজবাড়িতে বিজয়ার মিষ্টিমুখে এই লাড্ডু প্রজাদের বিলি করতেন রাজা। লাড্ডু তৈরির সময় গাওয়া ঘিয়ের গন্ধে এলাকা ম-ম করত।" কাস্তার মিঠাই এর প্রধান উপকরণ ছানা, ক্ষীর, বেসন, ময়দা (বা আটা), এলাচ, জায়ফল, জয়িত্রি, কাজু, কিসমিস।


সারা বাংলা জুড়েই জনপ্রিয় কিছু মিষ্টির নাম

অমৃতি




অমৃতি বা অমৃত্তি বা আমিত্তি  কিছুটা জিলিপির মত দেখতে এক প্রকার মিষ্টি। তবে এর রঙ সাধারণত লাল বা কমলা হয় এবং এটা খেতেও জিলিপির থেকে আলাদা হয়। এটি তৈরি হয় অড়হর ডাল ভিজিয়ে বেটে সেটি ভেজে। কোথাও কোথাও একে আমিত্তি পিঠা হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়। এটি একটি শুকনা মিষ্টি যাতে দুধের ছানা ব্যবহার করা হয় না।

কাঁচাগোল্লা

কাঁচাগোল্লা দুধ দিয়ে তৈরি এক প্রকার মিষ্টান্ন। এই মিষ্টান্নটি গরুর দুধ হতে প্রাপ্ত কাঁচা ছানা হতে প্রস্তুত করা হয় বলে এটি কাঁচাগোল্লা বলে পরিচিত। বর্তমান বাংলাদেশের নাটোরে এর উৎপত্তি হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গের কিছু মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেও এই মিষ্টি প্রস্তুত করা হয়।

লেডিকেনি


লেডিকেনি বা লেডি কেনি হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জনপ্রিয় ভারতীয় মিষ্টি। এটি একটি হালকা ভাজা লালচে-বাদামী গোলাকার মিষ্টি যা ছানা এবং ময়দা দিয়ে তৈরি এবং চিনির তরল রসের মধ্যে ভেজানো থাকে। ১৮৫৬-৬২ সালের মধ্যে ভারতে গভর্নর-জেনারেল চার্লস ক্যানিংয়ের স্ত্রী লেডি ক্যানিংয়ের নামে নামকরণ করা হয় মিষ্টির এবং সকলের কাছে মিষ্টিটি লেডিকেনি নামে পরিচিত হয়।


উপরে দেওয়া মিষ্টির তালিকায় কিছু হাতে গোনা অত্যন্ত জনপ্রিও মিষ্টির নামগুলি কেবল বলাহয়েছে।এছাড়াও সারা বাংলা জুরে শএরও বেশি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি রয়েছে যেমন গজা, খাজা, সন্দেশ, জিলিপি, বোঁদে, গুজিয়া, রাবড়ি, রাজভোগ, লর্ড চমচম আরও কত কি।

 বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে একই ধরনের মিষ্টি স্থান বদলে অল্পবিস্তর পরিবর্তনের জন্য ভিন্ন নাম ও স্বাদ নিয়েছে। আর তাই একটি নিবন্ধে বাংলার সকল মিষ্টির নাম সংযোজন করা অসম্ভব।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ